ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম

ওজন কমানো অনেকের কাছেই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ডায়েটের পাশাপাশি নিয়মিত এক্সারসাইজ শরীরকে শুধু ফিট রাখে না, বরং চর্বি কমিয়ে শরীরকে সুন্দর ও সুস্থ রাখে। অনেক সময় মানুষ ভাবে জিমেই শুধু এক্সারসাইজ করা সম্ভব
ওজন-কমানোর-জন্য-১০টি-কার্যকর-ব্যায়াম

 কিন্তু আসলে ঘরে বসেও সহজ কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে দারুণ ফল পাওয়া যায়। আজ আমরা আলোচনা করব এমন ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম, যেগুলো নিয়মিত করলে শরীরের বাড়তি ওজন দ্রুত কমানো সম্ভব।

পেজ সুচিপত্রঃ ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম

দৌড়ানো (Running)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম এর মধ্যে দৌড়ানো এমন একটি এক্সারসাইজ যেটি সবচেয়ে প্রাকৃতিক এবং সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। সকালে বা সন্ধ্যায় খোলা বাতাসে দৌড়ানো শুধু শরীরকে ফিট রাখে না, মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য দৌড়ানো একটি সেরা শুরু হতে পারে। কারণ অল্প সময়েই এটি প্রচুর এনার্জি ব্যবহার করে এবং শরীরের জমে থাকা ফ্যাট গলাতে শুরু করে।শুরুতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট দৌড়ানো যথেষ্ট। তবে নিয়মিত অভ্যাস হয়ে গেলে সময় বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট করা যায়। অনেকেই মনে করেন, দ্রুত দৌড়ানোই বেশি উপকারী, কিন্তু আসলে ধীরগতির সাথে দীর্ঘসময় দৌড়ানোও সমান কার্যকর। এতে শরীরের মেটাবলিজম দ্রুত কাজ করতে শুরু করে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন হয়।

দৌড়ানোর সময় সঠিক পোশাক ও জুতো ব্যবহার করা জরুরি। আরামদায়ক স্পোর্টস শু পরলে পায়ের ওপর চাপ কম পড়ে এবং আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে না। একইসাথে খেয়াল রাখতে হবে শরীরের ভঙ্গিমা ঠিক আছে কিনা। বুক সোজা, কাঁধ ঢিলা এবং শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে। এই নিয়মগুলো মানলে দৌড়ানো আরও আরামদায়ক হয়।সবচেয়ে বড় কথা হলো, দৌড়ানো শুধু শরীরের চর্বি কমায় না, বরং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে। তাই ওজন কমাতে চাইলে এবং সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা দৌড়ানোর অভ্যাস করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ সাধারণ রোগ ও তাদের ঘরোয়া চিকিৎসা

স্কোয়াট (Squats)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম এর মধ্যে স্কোয়াটকে বলা হয় “কিং অব এক্সারসাইজ”। কারণ এটি শরীরের একাধিক অংশকে একসাথে কাজে লাগায়। বিশেষ করে উরু, কোমর, নিতম্ব ও পেটের পেশি স্কোয়াটের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। যারা দীর্ঘদিন ধরে ওজন কমাতে চেষ্টা করছেন কিন্তু বিশেষ ফল পাচ্ছেন না, তাদের জন্য স্কোয়াট হতে পারে একটি দুর্দান্ত সমাধান।প্রথমে হয়তো অনেকের কাছে এটি কঠিন মনে হবে। তবে ধীরে ধীরে অভ্যাস করলে শরীর অভ্যস্ত হয়ে যায়। শুরুতে প্রতিদিন ১০-১২ বার স্কোয়াট করা যায়, পরে সংখ্যা বাড়িয়ে ২০-২৫ বা তারও বেশি করা সম্ভব। এতে শরীরের বাড়তি ক্যালোরি দ্রুত খরচ হয় এবং ফ্যাট জমার প্রবণতা কমে যায়। সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো, স্কোয়াট করতে কোনো বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। ঘরে বসেই খুব সহজে করা যায়।

স্কোয়াট করার সময় শরীরের ভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পা দুটি কাঁধসমান ফাঁক রেখে দাঁড়াতে হবে, তারপর ধীরে ধীরে বসার ভঙ্গিতে নামতে হবে। কোমর সোজা রাখতে হবে, যেন মেরুদণ্ডে চাপ না পড়ে। আবার অনেকেই হঠাৎ দ্রুত উঠে পড়েন, যা ঠিক নয়। ধীরে ধীরে উঠতে ও নামতে হবে। এতে শরীরের ওপর সঠিক চাপ পড়ে এবং ফলাফল আরও ভালো হয়।নিয়মিত স্কোয়াট করলে শুধু ওজন কমে না, শরীরের শক্তিও বাড়ে। অনেক সময় অতিরিক্ত ওজনের কারণে হাঁটাচলায় কষ্ট হয়, দ্রুত হাঁপিয়ে যাওয়া বা ক্লান্তি দেখা দেয়। স্কোয়াটের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোও কমে যায়। পাশাপাশি এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং ফুসফুসকে সক্রিয় রাখে। তাই ওজন কমানোর পাশাপাশি সুস্থ ও শক্তিশালী শরীর গড়তে স্কোয়াটের বিকল্প নেই।

প্ল্যাঙ্ক (Plank)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম এর মধ্যে প্ল্যাঙ্ক একটি অত্যন্ত কার্যকর এক্সারসাইজ। বাইরে থেকে দেখলে এটি হয়তো খুব সহজ মনে হয় মাটিতে হাত ও কনুই রেখে শরীর সোজা করে ধরে রাখা। কিন্তু বাস্তবে প্ল্যাঙ্ক করা অনেক কঠিন, কারণ এটি শরীরের কোর মাংসপেশিকে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় করে। পেটের বাড়তি চর্বি কমানোর জন্য এটি অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্যায়াম।শুরুতে প্রতিদিন মাত্র ২০–৩০ সেকেন্ড প্ল্যাঙ্ক করা যায়। ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে এক মিনিট, দুই মিনিট কিংবা তিন মিনিট পর্যন্ত নেয়া সম্ভব। নিয়মিত অভ্যাস করলে শরীরের ভেতরে সহনশীলতা তৈরি হয়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট প্ল্যাঙ্ক করলে পেটের চর্বি দ্রুত কমতে শুরু করে এবং শরীর টোনড হয়ে ওঠে।

প্ল্যাঙ্ক করার সময় ভঙ্গি সঠিক রাখা সবচেয়ে জরুরি। কনুই কাঁধের নিচে থাকবে, শরীর সোজা থাকবে এবং কোমর উপরে নিচে দুলবে না। অনেকেই শুরুতে ভুল ভঙ্গিতে করে, ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বা কাউকে দেখে ভঙ্গি ঠিক করার চেষ্টা করা উচিত। ভঙ্গি ঠিক থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে।শুধু পেটের চর্বিই নয়, প্ল্যাঙ্ক করার মাধ্যমে হাত, কাঁধ এবং পিঠের পেশিও শক্তিশালী হয়। যারা দীর্ঘসময় কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী। কারণ এটি শরীরের ভঙ্গিমা ঠিক রাখে এবং পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, প্ল্যাঙ্ক করতে কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না, শুধু একটি সমান জায়গা থাকলেই যথেষ্ট। তাই ওজন কমানো ও শরীরকে ফিট রাখতে প্ল্যাঙ্ক একটি সেরা এক্সারসাইজ।

লাঞ্জেস (Lunges)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম এর মধ্যে লাঞ্জেস একটি জনপ্রিয় ব্যায়াম যা বিশেষভাবে ওজন কমানো এবং শরীরের নীচের অংশকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি করতে গেলে মূলত উরু, কোমর ও নিতম্বের পেশীতে চাপ পড়ে। যারা অনেক সময় ধরে পেট বা উরুর বাড়তি চর্বি কমাতে চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য লাঞ্জেস একটি কার্যকর সমাধান। কারণ এই ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের বড় মাংসপেশীগুলো সক্রিয় হয়, আর বড় মাংসপেশী সক্রিয় হলে প্রচুর ক্যালোরি খরচ হয়।শুরুতে অনেকের কাছে লাঞ্জেস কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে এটি খুব সহজ। প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে, তারপর এক পা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং হাঁটু ভাঁজ করে শরীর নামাতে হবে। পেছনের পা সামান্য বাঁকানো থাকবে। এভাবে একবার ডান পা, একবার বাঁ পা ব্যবহার করে প্রতিদিন ১০–১২ বার অনুশীলন করা যায়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেখা যাবে উরু ও নিতম্বের ফ্যাট কমতে শুরু করেছে।

এই ব্যায়াম শুধু ওজন কমায় না, শরীরের ভারসাম্যও উন্নত করে। নিয়মিত লাঞ্জেস করলে হাঁটার ভঙ্গি ঠিক হয়, দৌড়ানোর ক্ষমতা বাড়ে এবং শরীর আরও ফ্লেক্সিবল হয়ে ওঠে। যারা দীর্ঘসময় ডেস্কে বসে কাজ করেন, তাদের জন্য লাঞ্জেস বিশেষভাবে উপকারী। কারণ এটি শরীরকে নড়াচড়া করায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীরকে সতেজ রাখে।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো লাঞ্জেস করার মাধ্যমে শরীরের সহনশীলতা বাড়ে। শুরুতে হয়তো ১০ বার করাই কঠিন লাগবে, কিন্তু কয়েকদিন পর সহজ মনে হবে। ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়িয়ে নিলে আরও বেশি ক্যালোরি বার্ন হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এটি করতে কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না, ঘরেই সহজে করা যায়। তাই যারা বাড়তি খরচ না করে ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য লাঞ্জেস একটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি ও কার্যকর এক্সারসাইজ।

ওজন-কমানোর-জন্য-১০টি-কার্যকর-ব্যায়াম

 বার্পিজ (Burpees)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম এর মধ্যে বার্পিজ অন্যতম ও সবচেয়ে কার্যকর। কারণ একবারে এটি শরীরের প্রায় সব মাংসপেশীকে কাজে লাগায়। অনেকেই একে “ফুল বডি ওয়ার্কআউট” বলেন। কারণ বার্পিজ করার সময় হাত, পা, বুক, পেট এবং কাঁধের পেশি সক্রিয় থাকে। ফলে শরীর প্রচুর এনার্জি খরচ করে এবং দ্রুত ক্যালোরি বার্ন হয়। যারা অল্প সময়ে বেশি ফল চান, তাদের জন্য বার্পিজ একটি আদর্শ ব্যায়াম।বার্পিজ করতে গেলে প্রথমে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, তারপর হঠাৎ বসে দুই হাত মাটিতে রাখতে হবে, সেখান থেকে লাফিয়ে পা পিছনে নিয়ে প্ল্যাঙ্ক অবস্থায় যেতে হবে। আবার দ্রুত পা সামনে এনে দাঁড়াতে হবে এবং সঙ্গে লাফ দিয়ে হাত উপরে তুলতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি একবার বার্পি হিসেবে গণনা হয়। শুরুতে দিনে ৫–৬ বার করলে কষ্ট হতে পারে, কিন্তু কয়েকদিন পর শরীর অভ্যস্ত হয়ে গেলে ১৫–২০ বার করা সম্ভব।

বার্পিজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি শরীরের মেটাবলিজম দ্রুত বাড়ায়। একবার বার্পিজ করলে শরীর দীর্ঘসময় ক্যালোরি পোড়াতে থাকে। ফলে শুধু এক্সারসাইজ করার সময় নয়, পরবর্তী সময়েও চর্বি কমতে থাকে। তাই যারা ওজন কমানোর জন্য দ্রুত ফল চান, তাদের রুটিনে বার্পিজ রাখতেই হবে।আরেকটি বিষয় হলো বার্পিজ করার জন্য কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই এবং খুব কম জায়গায়ও এটি করা সম্ভব। তাই জিমে না গিয়েও ঘরে বসে সহজেই করা যায়। তবে বার্পিজ করতে শরীরের ভঙ্গি সঠিক রাখা জরুরি, নাহলে আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। ধীরে ধীরে অনুশীলন করলে শরীরের শক্তি বাড়ে, সহনশীলতা উন্নত হয় এবং ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরও আরও ফিট হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুনঃ প্রতি সপ্তাহে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করুন

জাম্পিং জ্যাকস (Jumping Jacks)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম এর ক্ষেত্রে জাম্পিং জ্যাকস একটি অসাধারণ কার্ডিও এক্সারসাইজ। এটি অনেকটা খেলাধুলার মতো মজার হলেও শরীরে দ্রুত ক্যালোরি পোড়ায় এবং পুরো শরীরকে সক্রিয় করে তোলে। সাধারণত অনেকেই শিশু বয়সে এই ব্যায়াম করেছে, কিন্তু ওজন কমানোর জন্য এটি যে কতটা কার্যকর হতে পারে, সেটা অনেকেই জানেন না। প্রতিদিন মাত্র ১০–১৫ মিনিট জাম্পিং জ্যাকস করলে শরীর থেকে প্রচুর ক্যালোরি খরচ হয় এবং ফ্যাট জমার প্রবণতা কমে।জাম্পিং জ্যাকস করতে হলে প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। তারপর হাত ও পা একসাথে প্রসারিত করে লাফ দিতে হবে এবং আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। এইভাবে ক্রমাগত করলে শরীরের হার্টবিট বেড়ে যায়, ফলে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় এবং মেটাবলিজম সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে শরীরের বাড়তি চর্বি পোড়ে এবং ধীরে ধীরে ওজন কমতে শুরু করে।

এই ব্যায়ামের অন্যতম সুবিধা হলো এটি করার জন্য বিশেষ কোনো সরঞ্জাম বা বড় জায়গার প্রয়োজন হয় না। ঘরেই দাঁড়িয়ে মাত্র কয়েক মিনিট করলে এর সুফল পাওয়া যায়। ব্যস্ত জীবনে যারা সময় বের করতে পারেন না, তাদের জন্য এটি দারুণ সমাধান। কারণ অল্প সময়ে অনেকটা ক্যালোরি খরচ করা সম্ভব। এছাড়া জাম্পিং জ্যাকস শরীরের স্ট্যামিনা ও সহনশীলতাও বাড়ায়।সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, জাম্পিং জ্যাকস শুধু ওজন কমাতেই সাহায্য করে না, বরং মানসিক চাপ কমাতেও সহায়ক। নিয়মিত করলে শরীর সতেজ থাকে, মন ভালো থাকে এবং ঘুমের মান উন্নত হয়। তাই যারা সহজ, দ্রুত এবং কার্যকর ব্যায়াম খুঁজছেন, তাদের জন্য জাম্পিং জ্যাকস একটি দারুণ পছন্দ হতে পারে।

সাইক্লিং (Cycling)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম এর মধ্যে ওজন কমানোর জন্য সাইক্লিং একটি অত্যন্ত কার্যকর ও মজার ব্যায়াম। এটি শুধুমাত্র পা ও নিতম্বকে শক্তিশালী করে না, বরং পুরো শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। যারা ওজন কমাতে চান এবং একইসাথে বাইরে বের হওয়ার আনন্দও নিতে চান, তাদের জন্য সাইক্লিং আদর্শ। সকাল বা সন্ধ্যায় খোলা জায়গায় সাইক্লিং করলে ক্যালোরি পোড়ানোর পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি এবং শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ে।সাইক্লিং শুরু করতে হলে প্রয়োজন শুধু একটি বাইক এবং নিরাপদ পথ। শুরুতে ২০–৩০ মিনিট ধীরে ধীরে সাইক্ল চালানো যেতে পারে। ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে ৪৫ মিনিট বা এক ঘণ্টাও করা সম্ভব। নিয়মিত সাইক্লিং করলে পা ও কোমরের মেদ কমতে শুরু করে এবং শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে যারা দীর্ঘক্ষণ বসে অফিসে কাজ করেন, তাদের জন্য সাইক্লিং রক্ত সঞ্চালন এবং পেশীর কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

সাইক্লিংয়ের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এটি হাই ইন্টেন্সিটি ও লো ইমপ্যাক্ট এক্সারসাইজ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ, হাঁটতে হাঁটতে বা দৌড়াতে দৌড়াতে যেসব মানুষ পায়ের ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভব করেন, তারা সাইক্লিংয়ে সহজেই ওজন কমাতে পারে। কারণ এতে পা ও জয়েন্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করা সম্ভব হয়।সাইক্লিং শুধু শারীরিকভাবে কার্যকর নয়, মানসিকভাবেও উপকারি। বাইকের পেছনে বসে খোলা বাতাসে চলাফেরা করলে স্ট্রেস কমে, মন সতেজ হয় এবং ঘুমের মানও উন্নত হয়। তাই যারা ওজন কমাতে চান, শরীরকে শক্তিশালী রাখতে চান এবং একই সঙ্গে মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য চান, তাদের জন্য সাইক্লিং একটি দারুণ সমাধান।

পুশ-আপস (Push-ups)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়ামের ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরকে শক্তিশালী ও টোনড রাখতে পুশ-আপস একটি অত্যন্ত কার্যকর ব্যায়াম। এটি মূলত বুক, কাঁধ, হাত ও কোরের পেশীকে সক্রিয় করে। অনেকেই ভাবেন, পুশ-আপস শুধু বুকের পেশি বাড়ায়, কিন্তু আসলে এটি পুরো শরীরের জন্য উপকারী। নিয়মিত পুশ-আপস করলে শরীরের মেটাবলিজম দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ফলে ক্যালোরি বার্নের হার বাড়ে এবং ওজন কমানো সহজ হয়।শুরুতে দিনে ১০–১৫ বার পুশ-আপস করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়িয়ে ২০–২৫ বা তারও বেশি করা সম্ভব। যারা একেবারে নতুন, তারা হাঁটু ভেঙে পুশ-আপস দিয়ে শুরু করতে পারে। পুশ-আপসের মাধ্যমে শুধু পেশি শক্ত হয় না, শরীরের স্ট্যামিনা এবং সহনশীলতাও বাড়ে। ফলে দীর্ঘ সময় ব্যায়াম করা সহজ হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ে।

পুশ-আপস করার সময় ভঙ্গি ঠিক রাখা জরুরি। হাত কাঁধের সমান ফাঁকে থাকবে, কোমর সোজা থাকবে এবং পিঠ ধাপে ধাপে নিচে নামবে। অনেকেই শুরুতে ভুল ভঙ্গিতে করলে পিঠ বা কাঁধে আঘাত পেতে পারেন। তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সঠিক ভঙ্গি চেক করা ভালো। ভঙ্গি ঠিক থাকলে প্রতিদিনের অভ্যাসে শরীর দ্রুত টোনড হয়ে ওঠে।পুশ-আপস করার আরেকটি সুবিধা হলো, এটি করার জন্য কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। শুধু মাটির সমান জায়গা থাকলেই যথেষ্ট। তাই ঘরেই খুব সহজে ওজন কমানো এবং শরীরকে শক্তিশালী করার জন্য পুশ-আপস একটি দারুণ ব্যায়াম। এটি নিয়মিত করলে শুধু শরীর ফিট থাকে না, মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।

রাশিয়ান টুইস্ট (Russian Twists)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম এর মধ্যে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং কোমরকে ফ্ল্যাট করার জন্য রাশিয়ান টুইস্ট একটি অত্যন্ত কার্যকর ব্যায়াম। এটি মূলত পেটের সাইড পেশি, অ্যাবডোমিনাল এবং কোমরের চারপাশের মাংসপেশি শক্তিশালী করে। যারা ঘরে বসে কম সময়ে পেটের মেদ কমাতে চান, তাদের জন্য এটি একটি সহজ এবং কার্যকর উপায়।ব্যায়ামটি করার জন্য মাটিতে বসে হাঁটু ভাঁজ করতে হবে এবং পায়ের পাতা মাটিতে রাখতে হবে। শরীর সামান্য পিছনের দিকে ঝুঁকানো থাকবে। হাত একসাথে জোড়া করতে হবে এবং ধীরে ধীরে শরীরের ডান দিকে ঘুরিয়ে মাটি স্পর্শ করতে হবে, তারপর বাম দিকে। এই পুরো ক্রিয়া একবার রাশিয়ান টুইস্ট হিসেবে গণ্য হয়। প্রথমে দিনে ১০–১৫ বার করা যেতে পারে, ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়িয়ে ২০–২৫ বা এক মিনিট পর্যন্ত করা যায়।

রাশিয়ান টুইস্ট করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি পেটের মেদ দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে কোমর সরু হয়, পেট শক্তিশালী হয় এবং শরীরের কোর বেশি টোনড হয়। এছাড়া এটি ব্যস্ত জীবনে যারা জিমে যেতে পারেন না, তাদের জন্য ঘরেই করা যায় এমন একটি ব্যায়াম।এই ব্যায়াম কেবল শারীরিকভাবেই কার্যকর নয়, মানসিকভাবেও সাহায্য করে। পেট ও কোমরের পেশি সক্রিয় হওয়ায় শরীরের এনার্জি লেভেল বেড়ে যায়, মন সতেজ থাকে এবং ক্লান্তি কম অনুভূত হয়। তাই যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান এবং কোমরকে টোন রাখতে চান, তাদের জন্য রাশিয়ান টুইস্ট একটি সেরা এক্সারসাইজ।

যোগব্যায়াম (Yoga)

ওজন কমানোর জন্য ১০টি কার্যকরী ব্যায়াম এর মধ্যে ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার জন্য যোগব্যায়াম একটি অপরিহার্য ব্যায়াম। এটি শুধু ফিটনেসের জন্য নয়, মানসিক শান্তি এবং শরীরের নমনীয়তার জন্যও কার্যকর। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে শরীরের চর্বি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে, পেশি টোনড হয় এবং মনও সতেজ থাকে। বিশেষ করে যারা ব্যস্ত জীবনযাপন করেন এবং ঘরে বসে ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য যোগব্যায়াম একটি সহজ, কার্যকর এবং নিরাপদ উপায়।যোগব্যায়ামের মধ্যে বিভিন্ন আসন যেমন সুর্যনমস্কার, ভজ্রাসন, ত্রিকোণাসন বা বোদ্ধাসন অন্তর্ভুক্ত। এগুলো নিয়মিত অনুশীলন করলে শরীরের সমস্ত পেশি সক্রিয় হয়, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং মেটাবলিজম উন্নত হয়। এছাড়া, শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ ও ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমে, ঘুমের মান উন্নত হয় এবং শরীর আরও শক্তিশালী ও ফ্লেক্সিবল হয়।

যোগব্যায়াম করার আরেকটি বড় সুবিধা হলো এটি কোনো সরঞ্জাম ছাড়াই করা যায়। শুধু একটি যোগমাদুর বা সমান মাটির জায়গা থাকলেই যথেষ্ট। ঘরে, আউটডোর বা অফিসের বিরতির সময়ও সহজেই করা সম্ভব। নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ে, ওজন কমতে থাকে এবং শরীর টোনড হয়।সবচেয়ে বড় কথা হলো, যোগব্যায়াম শুধু ওজন কমাতে সাহায্য করে না, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতেও বিশেষভাবে কার্যকর। যারা দীর্ঘমেয়াদে ফিট থাকতে চান, সুস্থ থাকতে চান এবং ওজন কমানোর পাশাপাশি মনকে শান্ত রাখতে চান, তাদের জন্য যোগব্যায়াম হলো চূড়ান্ত সমাধান। তাই ওজন কমানোর যাত্রায় যোগব্যায়ামকে অন্তত দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

ওজন-কমানোর-জন্য-১০টি-কার্যকর-ব্যায়াম

শেষ কথা

ওজন কমানো শুধু শরীরের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নয়, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত ওজন অনেক রোগের ঝুঁকি তৈরি করে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ কিংবা জয়েন্টের ব্যথা। তাই সঠিক সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা একটি বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত। উপরে উল্লেখ করা ০টি কার্যকরী ব্যায়াম নিয়মিতভাবে চর্চা করলে কেবল চর্বি কমবেই না, বরং শরীরের মাংসপেশি শক্তিশালী হবে, স্ট্যামিনা বাড়বে এবং প্রতিদিনের কাজকর্ম আরও সহজ হয়ে উঠবে।ব্যায়ামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ঘুমও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো ছাড়া শুধু ব্যায়াম করে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ওজন কমানোর যাত্রায় শরীর এবং মনের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।

সবশেষে বলা যায়, নিজের শরীরকে ভালোবাসুন এবং সেটিকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে হলেও ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। সময়ের সাথে সাথে আপনি দেখবেন, শুধু ওজনই কমছে না, বরং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ছে, মন আরও ভালো লাগছে এবং জীবন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। আজ থেকেই শুরু করুন, কারণ নিজের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করার মতো সময় আমাদের কারোর নেই।

আরও পড়ুনঃ সস্তায় কক্সবাজার ট্যুর বাজেট ফ্রেন্ডলি ভ্রমণ পরিকল্পনা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Scroll Tips 24 এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url