মানসিক চাপ কমানোর কিছু সহজ ও কার্যকরী কৌশল

আজকের তাড়াহুড়ো ও ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ যেন আমাদের সঙ্গে গভীর ভাবে মিশে গেছে। প্র এর ফলে শুধু মানসিক অবস্থা নষ্ট হয় না, বরং শরীরের উপরও এর প্রভাব স্পষ্টভাবে পড়ে।  দীর্ঘ সময় এই চাপের মধ্যে থাকলে মানসিক ক্লান্তি বেড়ে যায় এবং শারীরিক অসুস্থতার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।

কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করলে আমরা আমাদের জীবনকে আরও শান্ত স্থিতিশীল এবং আনন্দময় করে তুলতে পারি। আজকের এই পোস্টে আমি শেয়ার করবো মানসিক চাপ কমানোর কিছু কার্যকর উপায় যা প্রতিজন সহজেই তাদের দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ মানসিক চাপ কমানোর কিছু সহজ কৌশল

মানসিক চাপ কমানোর কিছু সহজ কৌশল

মানসিক চাপ কমানোর জন্য কিছু সহজ অভ্যাস মেনে চললে জীবন অনেকটাই হালকা মনে হয় এবং মনকে শান্ত রাখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো গভীর শ্বাস নেওয়া এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা। চাপের মুহূর্তে আমাদের হৃদস্পন্দন দ্রুত বেড়ে যায়, রক্তচাপ উর্ধ্বমুখী হয় এবং মনোযোগ একদম ছিটকে যায়। এমন সময়ে কয়েক মিনিট ধরে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়ার ব্যায়াম করলে মন শান্ত হয় এবং শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

দৈনন্দিন জীবনে যদি এই অভ্যাসগুলো নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে স্ট্রেস কমে যায়, মন হালকা থাকে এবং শরীরও সতেজ অনুভব করে। এটি কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়, শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে ব্যস্ত জীবনযাপনে, এই ছোট্ট সময় নিয়েও বড় ধরনের মানসিক প্রশান্তি পাওয়া সম্ভব।শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম অনুশীলন করুন

মানসিক চাপ বাড়লে প্রথমে শরীরেই তার প্রভাব দেখা দেয়। হৃদস্পন্দন দ্রুত বেড়ে যায়, রক্তচাপ উর্ধ্বমুখী হয় এবং মনোযোগ নানা দিকে ছুটে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর সমাধান হলো গভীর শ্বাস নেওয়া। শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে এবং মস্তিষ্ককে শান্তির সংকেত পাঠায়।

ভাবুন তো, অফিসে হঠাৎ একটি দরকারি কাজ এর খবর এল আতঙ্কে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে  এমন সময় ৫ মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি বুঝতে পারবেন মন অনেকটা হালকা হয়ে গেছে। এটি কেবল অফিসে নয়, পরীক্ষার হলে, বাসে ভ্রমণের সময় কিংবা ঘরে পরিবারের চাপের মধ্যেও কাজে দেয়।প্রতিদিন সকালে ১০ মিনিট এবং রাতে ঘুমানোর আগে ১০ মিনিট শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। মেডিটেশন এই অভ্যাস যুক্ত করা যায় যা মনকে আরও গভীরভাবে প্রশান্তি দেয়। 

আরও পড়ুন ঃ ভালোভাবে পড়াশোনা করার ৭টি কার্যকরী টিপস

 নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন

মানসিক চাপ কমানোর সবচেয়ে প্রাকৃতিক উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো নিয়মিত শারীরিক সক্রিয়তা। যখন আমরা নিয়ম করে ব্যায়াম করি তখন মস্তিষ্ক থেকে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয় যা স্বাভাবিকভাবেই মনের অবস্থা ভালো করে এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ব্যায়াম ঘুমকে ভালো করে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

অনেকে ভাবে ব্যায়াম মানে শুধু জিমে গিয়ে ভর তলা আসলে তা নয় প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো বা হালকা যোগব্যায়াম করলেই মানসিক চাপ কমানোর জন্য যথেষ্ট। আপনি সারাদিন অফিসে বসে কম্পিউটারের সামনে কাজ করছেন। কাজ শেষে পার্কে ৩০ মিনিট হাঁটলে শরীর যেমন চাঙা হবে, তেমনি মনেও সতেজতা আসবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সকালে সূর্যের আলোয় দৌড়ানো বা হাঁটা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দ্বিগুণ উপকারী। সূর্যের আলো থেকে শরীর ভিটামিন ডি পায় যা হতাশা দূর করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন অল্প সময় হলেও শরীরচর্চা করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন

ঘুম এবং মানসিক স্বাস্থ্য একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। যারা ঠিকমতো ঘুমান না তারা সাধারণত বেশি বিরক্ত উত্তেজিত এবং দুশ্চিন্তাপূর্ণ থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে একজন মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার।

আজকের আধুনিক জীবনে অনেকেই রাত জেগে কাজ করেন বা মোবাইলে সময় নষ্ট করেন। এর ফলে ঘুম কমে যায় এবং পরের দিন ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও মানসিক চাপ বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত ঘুমের রুটিন রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং একই সময়ে জাগা শরীরের বায়োলজিক্যাল ঘড়িকে ঠিক রাখে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটার ব্যবহার এড়িয়ে চলা ভালো। চাইলে হালকা বই পড়তে পারেন বা সুরেলা গান শুনতে পারেন। এছাড়া রাতে কফি বা চা কম খাওয়া উচিত। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করলে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায়।

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন

আমাদের খাদ্যাভ্যাস সরাসরি মানসিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত তেল, চর্বি, জাঙ্ক ফুড বা চিনি জাতীয় খাবার খেলে শরীর ভারী লাগে এবং মনের ওপর চাপ পড়ে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফল, সবজি, শস্য, বাদাম এবং পর্যাপ্ত পানি শরীরকে হালকা রাখে এবং মনকে শান্ত রাখে।

সকালে খালি পেটে তেলে ভাজা খাবার খেলেন। তখন শরীর ক্লান্ত মনে হবে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যাবে। কিন্তু যদি ফল খান, শরীর হালকা থাকবে এবং মানসিক চাপও কম অনুভূত হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করাও খুব জরুরি। অনেক সময় শরীর পানিশূন্য হলে আমরা অকারণে বিরক্ত হয়ে যাই যা স্ট্রেস বাড়ায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অর্জন করুন

অনেক সময় আমাদের মানসিক চাপ হয় সময় ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারার কারনে। যখন একসাথে অনেক কাজ জমে যায় তখন মনে চাপ তৈরি হয় এবং অস্থিরতা দেখা দেয়। তাই সময়কে সঠিকভাবে ভাগ করে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।প্রতিদিন সকালে একটি লিস্ট বানান। কাজগুলোকে গুরুত্ব অনুযায়ী সাজান। প্রথমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করুন তারপর ছোট ছোট কাজগুলো করুন। এতে কাজগুলো সহজ মনে হবে এবং চাপ কমে যাবে।

আরেকটি বিষয় হলো কাজ ফেলে রাখা এড়িয়ে চলা। অনেক সময় আমরা কোনো কাজকে আগামী কালের জন্য ফেলে দিই পরে সেটি জমে গিয়ে দ্বিগুণ চাপ তৈরি করে। তাই কাজ হাতে আসলেই ধীরে ধীরে শেষ করার চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুনঃ পেটের চর্বি কমানোর ৯টি সহজ উপায়

 পজিটিভ মানুষের সাথে সময় কাটান

আমাদের চারপাশের মানুষ আমাদের মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। যারা সবসময় নেতিবাচক কথা বলেন অভিযোগ করেন বা অন্যকে ছোট করে দেখান তাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটালে মন ভারী হয়ে যায় এবং অস্থিরতা অনুভূত হয়। কিন্তু যারা হাসিখুশি ইতিবাচক এবং উৎসাহ দেয় তাদের সঙ্গে সময় কাটালে মন হালকা হয়ে আসে এবং মনোবল বাড়ে।

পরিবার বা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোও মানসিক শান্তি দেয়। তাদের সঙ্গে খোলাখুলি ভাবে কথা বললে মন হালকা হয় চাপ কমে যায় এবং জীবন আরও সুখময় মনে হয়। তাই চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব ইতিবাচক মানুষদের কাছেই বেশি সময় কাটাতে। এটি কেবল মনের প্রশান্তি দেয় না বরং দৈনন্দিন জীবনের চাপ সামলাতে সাহায্য করে।

 নিজের জন্য সময় বের করুন

অনেক সময় আমরা কাজ পরিবার বা সামাজিক দায়িত্বে এত ব্যস্ত হয়ে যাই যে নিজের জন্য সময়ই পাই না। অথচ নিজের জন্য কিছু সময় বের করা মানসিক চাপ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট শুধু নিজের জন্য সময় বের করুন। এই সময়ে আপনি গান শুনতে পারেন বই পড়তে পারেন, আঁকতে পারেন, হাঁটতে পারেন বা আপনার প্রিয় কোনো শখে সময় দিতে পারেন।এই ছোট্ট সময়টুকুই আপনার মনকে শান্ত এবং ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই অভ্যাস পালন করলে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায় এবং আপনি দিনের বাকি সময় আরও সতেজ ও উদ্দীপিত অনুভব করবেন। এটি কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়, সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।

একজন ব্যস্ত কর্মজীবী নারী প্রতিদিন রাতের খাবারের পর আধঘণ্টা বই পড়েন। এই সামান্য সময় তার দিনের ক্লান্তি কমিয়ে দেয়। তাই নিজের পছন্দের কাজগুলোকে গুরুত্ব দিন এতে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।

শেষকথা

মানসিক চাপ আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা পুরোপুরি সম্ভব। গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন, পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সময় ব্যবস্থাপনা, পজিটিভ মানুষের সান্নিধ্য এবং নিজের জন্য সময় বের কর এই কয়েকটি কৌশল আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে। মনে রাখবেন শান্ত মনের চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু নেই। তাই আজ থেকেই ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং স্ট্রেসকে জয় করে আপনার জীবনকে আরও সুখী ও সফল বানান ।

আরও পড়ুনঃ সস্তায় বান্দরবান ট্যুর বাজেট ফ্রেন্ডলি ভ্রমণ পরিকল্পনা



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Scroll Tips 24 এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url